শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
এক দফা দাবিতে নার্সদের পতাকা মিছিল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে নেপালের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী স্থাপন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছে বিজিবি সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার ফুলেল শুভেচ্ছা বাড়ছে পদ্মার পানি, বন্যার আতঙ্ক রাজশাহীতে টেক্সটাইল করপোরেশন পরিদর্শন করলেন বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা দূষণ নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে বিশ্বব্যাংক : পরিবেশ উপদেষ্টা “যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার ঝটিকা সফর” স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াতের

বহুল আলোচিত নুসরাত হত্যার রায় আজ

জেলা প্রতিনিধি ॥

বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ (বৃহস্পতিবার)। রায় ঘোষণা করবেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ।

এ মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। অপরদিকে মামলায় ‘দুর্বল সাক্ষী ও বেশ কিছু অসঙ্গতি’ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে আসামিরা খালস পাবেন বলে দাবি করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও বাদীপক্ষের খণ্ডন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৪ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, এ মামলার আসামিরা ভিকটিম নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তা আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আশা করি এ মামলার আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে। এ মামলাটি বাংলাদেশে উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান বলেন, ন্যায়বিচারে আসামিরা খালাস পাবেন। কারণ রাষ্ট্রপক্ষ তাদের মামলার কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি।

ফেনী জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হাফেজ আহমেদ জানান, আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলার সার্বিক আইনি ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। গত ৩০ মে বৃহস্পতিবার ফেনীর আমলি আদালতের বিচারক জাকির হোসাইন নুসরাত হত্যা মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের পর ৪৭ কর্মদিবস পর্যন্ত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়। ৬১ কর্মদিবসে আলোচিত এ হত্যা মামালার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। গত ২৭ জুন মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলার ৯২ আসামির মধ্যে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার, বাবা একেএম মূসা ও ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হানসহ ৮৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাকি চারজনের পক্ষে নথিপত্র আদালতে পেশ করা হলে আদালত তা সাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করেন।

নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। পরে ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় নূর হোসেন, আলা উদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ জনি, সাইদুল ও আরিফুল ইসলামের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়।

অভিযোগপত্রে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিলের নাম উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শান্তি দাবি করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম।

পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। ওই দিনও মামলায় অভিযুক্ত ১৬ আসামিকে আদালতে আনা হবে।

ন্যায়বিচার চায় নুসরাতের পরিবার ও সহপাঠীরা

রায়ে ন্যায়বিচার চান নুসরাতের পরিবার, স্বজন ও তার সহপাঠীরা। আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়ে তাদের প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে তারা বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, শুধু রায় নয়, নিজ চোখে তা কার্যকর দেখতে চাই। মরলেও শান্তি পাবো যারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে তাদের বিচার দেখে যেতে পারলে।

মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, আমি ন্যায়বিচার চাই। আমার বোনকে (নুসরাত) যারা হত্যা করেছে আদালত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেবেন। সারাদেশের মানুষ নুসরাত হত্যার বিচারের দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি আমরা ন্যায়বিচার বঞ্চিত হবো না।

কোনো টাকাই খরচ হয়নি নুসরাতের পরিবারের

বহুল আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় কোনো রকম পারিশ্রমিক ছাড়াই আইনি সহায়তা করেছেন অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ, অ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জামন ও অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজুসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। তাদের দাবি এ মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে নুসরাতের পরিবারের কোনো অর্থ খরচ হয়নি।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, ২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানির মামলাটি পরিচালনা করি। ৬ এপ্রিল নুসরাত মারা যাওয়ার পর ১০ এপ্রিল থেকে এ মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই।

সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আইনি লড়াই লড়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমারও তিনটা মেয়ে আছে, আমার মেয়েরাও লেখাপড়া করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। আর কোনো মেয়েকে যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে এমন নির্মমতার শিকার হতে না হয় তার জন্য বিনা পারিশ্রমিকে নিরলসভাবে কাজ করছি।

আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ব্যাপারে শাহজাহান সাজু বলেন, এ মামলাটি পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। আসামিদের আইনীজীবীরা অনেক সময় কোর্টের ভেতরে এবং বাইরে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করেছেন। কিছু আইনজীবী অনেক অশোভন আচরণ করেছেন। নিজের মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে নুসরাতের জন্য লড়ে গেছি, কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করিনি। সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে এ মামলাটি স্বপ্রণোদিত হয়ে লড়েছি। অনেক সময় নিজের পকেট থেকে ব্যয় করেছি। নুসরাতের পরিবারকে এক টাকাও খরচ করতে হয়নি। একটা কাগজও কিনতে হয়নি।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 ithostseba.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com