সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
‘ন্যায়বিচার ও নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় দর্শনের শিক্ষা জরুরি’ সিপাহী বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে মুলাদীর সোনামদ্দিন বন্দরে বিএনপির আলোচনা সভা মুলাদীর চর বাটামারা জমির দখল পাচ্ছে না খোরশেদা আক্তার ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ২০২৪ এর পুনর্জন্ম : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের সাথে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সাক্ষাৎ মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে মুক্তি চায় আলি আকবার পরিবারবর্গ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে : উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অর্ন্তবর্তী সরকারের অন্যতম কাজ শহীদ পরিবারকে সহায়তা ও আহতদের পরিপূর্ন চিকিৎসা : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা আবারো এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব হলেন সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক যৌথ অভিযানে ভোলায় অস্ত্রসহ দুই ডাকাত আটক

নির্বাচনে ইসি ও ক্ষমতাসীন দলের যত চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলকে। আয়োজক সংস্থা নির্বাচন কমিশনকেও (ইসি) মোকাবিলা করতে হবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলন মোকাবিলা; অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান; নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বড় অংশের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন এড়ানো; ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো; ভোটের হার বৃদ্ধি; বিদ্রোহী প্রার্থী দমন, শরিক ও নির্বাচনমুখী দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতা; সহিংসতামুক্ত নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টি; সবার জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং অনিয়ম ঠেকানোসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, প্রত্যাহার শেষ দিন ১৭ জানুয়ারি।

সব দলের অংশগ্রহণ প্রধান চ্যালেঞ্জ : এদিকে তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সরকারের পদত্যাগ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা কখনও হরতাল, কখনও অবরোধ দিয়ে টানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হলেও তারা ভিন্ন ধরনের কর্মসূচি শুরু করবেন বলে জানা গেছে। তাদের এই কর্মসূচি নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা এসেছে। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জনের ঘোষণার পাশাপাশি প্রতিহত করার ঘোষণাও আসতে পারে।

মাঠের রাজনীতির অন্যতম বড় দল বিএনপি ও তাদের মিত্রদের নির্বাচন বিমুখী অবস্থানের মধ্যে সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে নির্বাচন শেষ করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। অবশ্য, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির মিত্রদের অংশসহ কতিপয় ধর্মভিক্তিক রাজনৈতিক দলের নির্বাচনমুখী হওয়ার বিষয়টি সরকারি দলের হালে বেশ পানি পেয়েছে। আরও নতুন নতুন দলসহ কিছু প্রভাবশালী নেতা নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেও তারা আশা প্রকাশ করেছেন। এতকিছুর পরও বিএনপির নির্বাচনে না আসলে সরকারি দল কতটা নির্বিঘ্নে নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে পারবে তার আশঙ্কা থেকেই যায়।

সহিংসতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আশ্বাস : সরকারি দলে ও নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা— বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না এসে প্রতিহতের ঘোষণা দিলে নির্বাচনি মাঠে বিশেষ করে ভোটগ্রহণের দিন সহিংসতা এড়ানো খুব সহজ হবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো ভোটের দিন কেন্দ্রে হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ব্যালটকবাক্স ছিনতাইসহ নানা সহিংসতার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও ২০১৪ সালের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা নির্বাচন কমিশনের মধ্যে নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের সেভাবে আশ্বস্ত করেছে বলেও দাবি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের জানিয়েছে— ২০১৪ সালের মতো পরিস্থিতি ঘটানোর আশঙ্কা তারা দেখছেন না। জনবল, দক্ষতা ও সমক্ষতার দিন থেকে তারা এখন অনেক শক্তিশালী বলেও ইসিকে জানিয়েছেন।’

ভোটারকে কেন্দ্রমুখী করাও বড় চ্যালেঞ্জ : নির্বাচনে ভোটের হার বাড়ানোর বিষয়টিতেও ইসি ও সরকারি দলের চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে। বিএনপিসহ বড় নিবন্ধিত দলগুলোর একটি অংশ নির্বাচনে না এলে ভোটারদের আগ্রহে ভাটা পড়তে পারে। পাশাপাশি বিরোধী দলের বর্জনে ভোটের পরিবেশ সহিংস হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হতে পারে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। তাছাড়া সাধারণ ভোটারদের মাঝে নির্বাচনকে ‘একতরফা’ মনে হতে পারে। এসব আশঙ্কা থেকে জনগণকে মুক্ত করে তাদের ভোট কেন্দ্রমুখী করাটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, বিএনপি ও তাদের মিত্রদের বর্জনে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সরাসরি ভোট হওয়া ১৪৭টি আসনে ৪০ ভাগেরও কম ভোট পড়েছিল। ঢাকায় পড়েছিল ২২ শতাংশ। ৩০০ আসনকে হিসাবে আনলে এই হার অর্ধেকে নেমে আসবে।

বুধবার (২২ নভেম্বর) কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনে কত পার্সেন্ট (শতাংশ) ভোট পড়লো, সেটা বিষয় নয়। নির্বাচন নির্বাচনের গতিতে হবে। সংবিধানে লেখা নেই কত ভোট কাস্ট হতে হবে। কেউ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারবে না। আমরা বলে দিয়েছি, যত ভোট কাস্ট হবে, তাই দিয়েই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কে অংশগ্রহণ করলো, কে করলো না, কত ভোট পড়ল, ভোটার উপস্থিতি কেমন— এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা সংবিধান মেনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবো।’

সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে না গেলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার সমর্থকদের মধ্যে ‘ভিন্ন উপায়ে’ ভোটের হার বাড়ানোর একটি প্রবণতা তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। সেক্ষেত্রে জালভোট ও অন্য কোন অনিয়মের বিষয়টি সামনে চলে আসতে পারে। সদ্য অনুষ্ঠিত লক্ষ্মীপুরের উপনির্বাচনের একাধিক কেন্দ্রে এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। পরে ইসিতে ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

এবারও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা : বিরোধী দলের ভোট বর্জনে প্রার্থীদের বড় একটি অংশের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। ২০১৩ সলে বর্তমানের সরকারি দলকে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। ওই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনাভোটে জয়ী হয়। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে সরকারকে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অবশ্য খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিনাভোটে নির্বাচন এড়াতে সরকার এবার আগে থেকেই সতর্ক হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে কিছু কিছু আসনে বিদ্রোহীদের উৎসাহিত করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এর বাইরে ১৪ দলীয় শরিকসহ ছোট ছোট দলগুলোকে অধিক আসনে প্রার্থী দিতে উৎসাহিত করা হতে পারে।

এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে বিদ্রোহী উৎসাহে মুদ্রার অপর পিঠ নিয়েও ভাবছে সরকারি দল। বিদ্রোহীদের উৎসাহ দেওয়া হলে তাদের মধ্যে জয়ী হওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যাবে। তবে এতে করে নির্বাচনে অনিয়ম ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

ডিসি-এসপিদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় কমিশনার মো. আলমগীর প্রশাসন, পুলিশ ও ইসির কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনে ভোট কম পড়লেও সমস্যা নেই। তবে ভোটকেন্দ্রে গন্ডগোল ও অনিয়ম যেন না হয়। আইন ও বিধি মোতাবেক ভোটগ্রহণ করার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি : নিকট অতীতের নির্বাচনি অভিজ্ঞতায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েও আওয়ামী লীগ ও আয়োজন সংস্থা নির্বাচন কমিশনের মধ্যে বেশ আগে থেকেই সংশয় তৈরি হয়েছে। অবশ্য সর্বশেষ পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ইসি দৃঢ় আশাবাদী বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। সরকারি দল এ ব্যাপারে তাদের শতভাগ আশ্বাস দিয়েছে বলেও তারা দাবি করেছে।

সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করাটা ইসির জন্য কিছুটা হলে কঠিন হবে বলে ধারণা খোদ ইসিরই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এ বিষয়ে বারবার বলেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমুলক হলে তাদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। সবাই নির্বাচনে মাঠে থাকলে মাঠ লেভেল প্লেয়িং হয়। এখানে প্রার্থী ও তার পোলিং এজেন্টারাই অনিয়ম প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।

আসন সমঝোতায় আসতে ক্ষমতাসীন দলকে বেগ পেতে হবে : নির্বাচনে আসন সমঝোতা ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বেশ বেগ পেতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তাদের আদর্শিক জোট ১৪ দল, নির্বাচনী জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (এ) ও নতুন করে নির্বাচনে আগ্রহী ছোট ছোট দলগুলোকে আসন ছাড় দিতে গিয়ে খানিকটা চাপে পড়তে হচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের শরিকদের প্রায় সকলেই এবার অতীতের চেয়ে বেশি সিট দাবি করছে। আবার নতুন নতুন দলগুলোর সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে গিয়েও সরকারি দলকে বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে। এতে করে দলের প্রভাবশালী অনেক সংসদ সদস্যের মনোনয়ন ঝুঁকিতে পাড়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে। কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ইসিতে সরকার সব ধরনের সহায়তা করছে। কাজেই আমি মনে করি মানুষ নির্ভয়ে নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ ভোট দেবে। পুরো জাতি নির্বাচনি উৎসবে মেতে উঠবে।’ নির্বাচনে কোনও দৃষ্কৃতিকারী বাধা দিতে এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তারা প্রতিহত করবে বলেও জানান দলের এই নেতা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপ-এর চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন সম্পন্ন করার আগেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে সরকারি দল আওয়ামী লীগকে। কারণ বিরোধী দলগুলোর বড় একটি অংশকে বাইরে রেখে নির্বাচন করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। তারা কীভাবে সেটি সামাল দিতে চায়, সেটিও বিবেচনার বিষয়।’

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 ithostseba.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com