রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন
মোঃ হুমায়ুন কবির প্রিন্স, হাতিবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি।।
লালমনিরহাটে একই শিক্ষা প্রতিষ্টানের দুই নাম। একটি হল, লালমনি বহুভাষী সার্টলিপি কম্পিউটার কমার্শিয়াল কলেজ ও অপরটি হলো শেখ সফিউদ্দীন কমার্স কলেজ।বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সহকারী কমিশনার (ভুমি) জি আর সারোয়ার লালমনি বহুভাষী সাটলিপি কম্পিউটার কমার্শয়িাল কলেজ লালমনিরহাট এর নাম পরিবর্তন ও সদস্য পদ বাতিল বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন দাভিল সংক্রান্ত আবেদনের তদন্ত করেন।
অনিয়ম আর দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে রাতারাতি কলেজের নাম পরিবর্তনের রহস্য ফাঁস পড়েছে। এবার কার্যক্রম পরিচালনা করা সেই আলোচিত কলেজটির এবার পুর্বের নাম পুনর্বহালের দাবী উঠেছে। খোদ কলেজটির সে সময়ের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ গোলাম ফারুক এমন দাবী তুলে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদন পেশ করেছে।
আবেদনে গোলাম ফারুক কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষকে অর্থ আত্মসাতকারী উল্লেখ করে তার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবী করে ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ওই অধ্যক্ষ স্বেচ্ছা চারিতার আশ্রয় নিয়ে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে তিনি কলেজের নাম পরিবর্তনসহ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পদ হতে পরিকল্পিত ভাবে তাকে বাদ দেন। এ প্রসংগে জেলা প্রশাসন সুত্র জানিয়েছেন আবেদন খানা খতিয়ে দেখে প্রয়োনীয় পদক্ষেপ গ্র্রহন করা হবে। অবস্থাদৃষ্টে কলেজটি নিয়ে আবারো নতুন করে বিরোধ সৃষ্টির সুচনা ঘটল। এরকম পরিস্থিতির মুখে আলোচনায় উঠে আসা সেই কলেজটি হচ্ছে শহরের জেলখানা রোডে অবস্থিত শেখ সফিউদ্দীন কমার্স কলেজ। যার পুর্বের নাম ছিল লালমনি বহুভাষী সার্টলিপি কম্পিউটার কমার্শিয়াল কলেজ।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে একক প্রচেষ্টায় লালমনি বহুভাষী সাটলিপি কম্পিউটার কর্মাশিয়াল নামে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর বগুড়াস্থ নট্টামস থেকে অনুমোদন লাভের পর কলেজটিতে শিক্ষাসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন কার্যক্রম বেশ গোছালো ভাবে চলতে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৯৯৫ খ্রি. প্রত্যেক জেলা হতে কারিগরি শিক্ষা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত কমিটির মাধ্যমে চাওয়া হয়। ওই তালিকায় এ কলেজটিকে সে সময় ১ নম্বর প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনোনিত হওয়ায় এটি পরে কারিগরি শিক্ষাক্রমের আওতাভুক্ত হয়।
জানাগেছে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করা পর্যন্ত সার্বিক কর্মকান্ডে স্ব-উদ্যোগে এটি চালু করায় তৎকালীন কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটি গোলাম ফারুককে আজীবন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।
এরপর থেকেই শুরু হয় অল্প দিনে নাম ডাক হওয়া এই কলেজটিকে নিয়ে নানা মুখি ষড়যন্ত্র। এরই অংশ হিসেবে কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষ মোঃ এন্তাজুর রহমানের প্ররোচনায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ এমদাদুল ইসলাম ফাতেমীর বিভিন্ন অনিয়ম কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় সেসময়ে গোলাম ফারুকের সাথে এমদাদুল ফাতেমীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি চরম আকার ধারণ করলে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পদ হতে গোলাম ফারুককে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে গোলাম ফারুক এ নিয়ে বিজ্ঞ দেওয়ানী আদালতের দারস্থ হলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক কলেজের ভাবমূর্তি রক্ষায় তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সকলের উপস্থিতিতে কলেজ প্রতিষ্ঠার যাবতীয় তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে গোলাম ফারুককে “আজীবন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় গোলাম ফারুক সে সময় আদালত থেকে সরে আসেন।
এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এমদাদুল ইসলাম ফাতেমী নিজ সুবিধা বিবেচনায় অন্যত্র চলে যাওয়ায় মোঃ এন্তাজুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার নিয়েই সে সুবিধামত নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভ করেন। এরপর শুরু করেন অনিয়ম দুর্নীতির তেলেসমাতি। অত্যন্ত কৌশল অবলম্বন করে তিনি ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাত করতে থাকেন। কৌশলবাজ এ অধ্যক্ষ‘র এরুপ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় তার সাথেও মতবিরোধ দেখা দেয় গোলাম ফারুকের।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা গোলাম ফারুক সাংবাদিকদেরকে বলেন, তার নিজ হাতের গড়া প্রতিষ্ঠানটি দিনে দিনে ধ্বংস দেখতে না পেরে অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের প্রতিকার চেয়ে কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটিসহ বিভিন্ন মহলে এ সর্ম্পকিত অভিযোগ করেন। তদন্তকালে ওই অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সে সময় ডিবি পুলিশ কর্তৃক লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা করা হয়। যার নম্বর -১০, তারিখ ১০/০৯/২০০০ খ্রি.।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অধ্যক্ষ এন্তাজুর রহমান কোন রকম নিয়মনীতি অনুসরন না করেই তিনি গোলাম ফারুককে পাশ কাটিয়ে আকস্মিকভাবে ওই কলেজের নাম পরিবর্তন করে “শেখ সফিউদ্দীন কমার্স কলেজ” নাম ধারন করে ছাত্রছাত্রী ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। আর এর মধ্য দিয়েই গোলাম ফারুক তার কলেজ ছিনতাইয়ের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তৎক্ষনাত তিনি জেলা প্রশাসকসহ এতদ্সংক্রান্ত্র সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে কলেজটির নাম পরিবর্তনের বিষয়ে অভিযোগ প্রদান করলেও সে বিষয়ে কোন সুরাহা এ যাবৎ হয়নি।
এ ব্যাপারে নাম পরিবর্তন করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অধ্যক্ষ এন্তাজুর রহমানের সাথে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি নন বলে সাফ জানিয়ে দেন। এমতাবস্থায় গোলাম ফারুক তার কলেজ উদ্ধারসহ প্রতিষ্ঠানটির পুর্বের সার্বজনীন নাম “লালমনি বহুভাষী সার্টলিপি কম্পিউটার কমার্শিয়াল কলেজ” নাম পুনর্বহালের দাবী তুলে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক বরাবর ওই আবেদন পেশ করেন।
এ বিষয়ে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে কথা হলে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সুত্র ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, আবেদনটি নিঃসন্দেহে স্পর্সকাতর। তাই এটি গুরুত্বের সাথে আগামী ৫ ডিসেম্বর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভুমি) জি আর সারোয়ার ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, উভয়ের কাগজপত্র বিশ্লেষন, পর্যবেক্ষন ও পরীক্ষা করে দেখে নেয়া হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তদন্ত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেয়া হবে।