বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ অপরাহ্ন
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার গৌরিপুর বাজার এলাকা হতে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার ও ম্যাগাজিনসহ বিদেশী পিস্তল, চাপাতি, চাকু, প্রিন্টার ও জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত ভূয়া ২৪টি সীল ও জালিয়াতির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার র্যাব-১১ এর একটি দল তাদের গ্রেফতার করে। সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে অবিস্থিত র্যাব -১১ এর প্রধান কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলেপ উদ্দিন, পিপিএম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
র্যাব ১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন গৌরিপুর বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো দাউদকান্দির মোঃ ইদ্র্রিস মিয়া (৪৪), মুরাদনগর এলাকার ইউপি সদস্য মোঃ মমিনুল ইসলাম (৪৬), একই এলাকার আবু বক্কর সালাফী (৪৩) ও রুবেল (২৪)। গ্রেফতারকৃত আসামীদের দখল হতে ম্যাগাজিনসহ ১টি বিদেশী পিস্তল, ৩ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ১টি চাপাতি, ১টি চাকু, ৪ ধরণের প্রিন্টারের কালিসহ ১টি রঙ্গিন প্রিন্টার, জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত অগ্রণী, ডাচ বাংলা, সোনালী, পূবালী, ইসলামী ব্যাংকের ভূয়া সীল ২৪টি, ১৬টি সোনালী ব্যাংকের ভুয়া ট্রান্জাকশন ভাউচার, ২৮টি বিভিন্ন ব্যাংকের ভুয়াএক্সপ্রেস মানি রিসিট ভাউচার, ২ পাতা এনসিসি ব্যাংকের ভুয়া প্যামেন্ট সিলিপ, ১১ জনের ভুয়া গলাকাটা এনআইডি এবং ভুয়া এনআইডি তৈরীর ছবি-১৬টি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ব্যাংক জালিয়াতি চক্র। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ অভিনব কৌশলে ব্যাংকের ভাউচার জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা আত্বসাৎ করে আসছে। গ্রেফতারকৃত মোঃ ইদ্রিস এই জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা। সে গত ৩ বৎসর পূর্বে হোটেলে কাজ করার সময় এক ভারতীয় সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার পশু ভাই এর সাথে তার বন্ধুত্ব হয় এবং তার কাছ থেকে ব্যাংকের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্বসাৎ করার বিভিন্ন অভিনব কৌশল শিখে। পশু ভাই দীর্ঘদিন ধরে এটিএম বুথ হ্যাক করে বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও রেমিটেন্স জালিয়াতির সাথে জড়িত ছিল। ইদ্রিস প্রথমে যে ব্যাংকের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্বসাৎ করবে সেই ব্যাংক নির্বাচন করে। নির্বাচিত ব্যাংক এ প্রথমে বৈধভাবে তার পরিচিত লোক বিদেশ থেকে রেমিটে›েসর মাধ্যমে তার নামে অল্প পরিমাণ টাকা পাঠায়। সেই টাকা উত্তোলনের জন্য তাকে একটি গোপন পিন ন¤¦র দেয়া হয়। উক্ত গোপন পিন নাম্বার নিয়ে ব্যাংকে গেলে ব্যাংক টাকা উত্তোলনের জন্য একটি ভাউচার তৈরি করে দেয়। অতঃপর উক্ত ভাউচার দিয়ে টাকা উঠানোর আগে ইদ্রিস তার মোবাইলে ভাউচারের একটি ছবি তুলে রাখে। মোবাইলে ভাউচারের ছবি দিয়ে তার প্রিন্টারে নতুন নতুন ভাউচার তৈরী করে তাতে নতুন রেমিটেন্স নাম্বার বসিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর এবং বিভিন্ন এনআইডি’র স্বাক্ষর নকল পূর্বক গলাকাটা এনআইডি (এনআইডি’র ছবি পরিবর্তন) ব্যাংক এ জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করে। সে এইভাবে অগ্রণী ব্যাংকের চাঁদপুরের সাচার শাখা ও সোনালী ব্যাংকের রহিমা নগর শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের কুমিল্লাার মুরাদনগর শাখা, বি-বাড়িয়ার মাধবপুর শাখাসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ভাউচার জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করে। প্রতারক ইদ্রিস মিয়া ২০১৮ সালে ১১ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংকের বুড়িচং শাখায় বিদেশ থেকে পাঠানো গোপন নম্বরের টাকা জালিয়াতি করে তুলতে গিয়ে হাতে নাতে আটক হওয়ার পরে তাকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করলে কিছু দিন কারাগারে থেকে জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে সক্রিয় থাকে। গ্রেফতারকৃৃত মমিনুল ইসলাম একজন ইউপি সদস্য। সে এই জালিয়াতি চক্রের সাথে গত ১ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে। গত ৪ মাস আগে চাঁদপুর অগ্রণী ব্যাংকের বাবুর হাট শাখায় ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সময় হাতে নাতে আটক হয়ে জেলে যায়। ১৭ দিন জেল খেটে জামিনে আসার পর পুনরায় জালিয়াতি চক্রের সাথে সক্রিয় হয়। আবু বক্কর সালাফী ও রুবেল এই চক্রের অন্যতম সহযোগী সদস্য। এই চক্রটি ব্যাংকের টাকা জালিয়াতির পাশাপাশি পেশাদার ছিনতাইকারী, ভারাটে ক্যাডার ও ডাকাতির সাথে জড়িত বলে স্বীকার করে। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।
গ্রেফতারকৃৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।