বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ অপরাহ্ন
ফ্রান্সে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার ব্যঙ্গচিত্র কার্টুন ছাপিয়ে ইসলামের অবমাননার প্রতিবাদে ৭ নভেম্বর শনিবার ঢাকা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত বাংলাদেশের লাখো নেতাকর্মীদের বিশাল গণজমায়েত ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নবীপ্রেমিক সুন্নী জনতা ফ্রান্স বিরোধী গণমিছিলে অংশ নিতে সকাল থেকেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে অবস্থান নেয়। ফ্রান্স বিরোধী ফেস্টুন ও কালেমা খচিত ব্যানার নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নবীপ্রেমিক মুসলমানরা বায়তুল মোকাররম এলাকায় অবস্থান নেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে গণজমায়েত ও বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্রান্স সরকার মহানবী (দ.) এর শানে বেয়াদবি করে বিশ্বে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ফ্রান্সকে যারা সমর্থন করবে তারাও সাম্প্রদায়িক জঙ্গি। নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, নবী (দ.) এর অবমাননার প্রতিবাদে অবিলম্বে জাতীয় সংসদে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করে ঈমানী পরীক্ষা দিন। ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের মাধ্যমে নবীর প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে। নবী (দ.) এর প্রেমই জান্নাতমুখী হওয়া যায়। নবীকে যারা ভালোবাসবেন তারা নবীর সাথে জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। ৯০% মুসলমানের দেশে নাস্তিক-মুরতাদদের ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। যারাই ইসলাম মুসলমানদের দুশমনদের পক্ষে মিছিল মিটিং করবে তাদের এদেশে থাকার অধিকার নেই। আহলে সুন্নাতের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আল্লামা কাজী মঈনুদ্দিন আশরাফীর সভাপতিত্বে ও নির্বাহী মহাসচিব আল্লামা মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হকের সঞ্চালনায় এই কর্মসূচী পালন করে সংগঠনটি। সমাবেশ থেকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শানে অবমাননার জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থণার আহ্বান জানানো হয়, না হলে প্রতিবাদে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে বাংলাদেশে ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানানো হয়। দাবি আদায়ে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেয়া হয়।
আহলে সুন্নাতের চেয়ারম্যান শাইখুল হাদিস আল্লামা কাজী মঈনুদ্দিন আশরাফী বলেন, প্রাণাধিক প্রিয় নবীর অপমান কোন মুসলমান সয়বে না। তাই আজ সুন্নি জনতা রাজপথে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও ফ্রান্সের পত্রিকা শার্লি হ্যাবদোকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, না হলে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সুন্নি মুসলিম দেশে ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধ করে দিতে হবে। সংসদে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করতে হবে। ফরাসি পণ্য বর্জন করতে হবে। ধর্ম অবমাননার দায়ে ফ্রান্স সরকারে বিরুদ্ধে জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাব আনতে হবে। একই সঙ্গে ফ্রান্সের মুসলমানদের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করে মসজিদসমূহ খুলে দিতে হবে। মহাসচিব আল্লামা সৈয়দ মসিহুদৌল্লা বলেন, যদি সরকার আমাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে তাহলে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেবো। প্রয়োজনে এদেশের সর্বস্তরের সূন্নি জনতা ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধ করে দেবে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, আহলে সুন্নাতের নির্বাহী চেয়ারম্যান আল্লামা আব্দুল বারী জেহাদী, মহাসচিব আল্লামা সৈয়দ মসিহুদৌল্লা, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব জননেতা আল্লামা এম.এ.মতিন, স.উ.ম আব্দুস সামাদ, আহলে সুন্নাতের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, হাফেজ কাজী আব্দুল আলিম রেজভী, ড.হাফেজ হাফিজুর রহমান, ড. এ.কে.এম. মাহবুবুর রহমান, প্রিন্সিপাল ড. আফজাল হোসাইন, সৈয়দ মুজাফফর আহমাদ, গাউছিয়া কমিটি ঢাকা মহানগরের সভাপতি আব্দুল মালেক বুলবুল, পীরে তরিকত মোহাম্মদ আলী পেশওয়ারী, মুফতি মাহমুদুল হাসান আল-কাদেরী, মুফতি জসিম উদ্দিন আল আযহারী, হাফেজ মাওলানা মনিরুজ্জামান আল-কাদেরী, মোবারক হোসেন ফরায়েজী, মাওলানা ইসমাঈল নোমানী, আলহাজ্জ মোহাম্মদ শাহআলম, অ্যাডভোকেট দেলওয়ার হোসেন পাটোয়ারী আশরাফী, ড. এম.এ.আউয়াল, পীরে তরিকত ওয়ালি উল্লাহ আশেকী, মাও: শাহ জালাল উদ্দিন আখঞ্জী, শাহ জালাল আল-কাদেরী, যুবসেনার কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মাহমুদ ভূইয়া মানিক, মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরী, মুফতি এহসানুল হক মুজাদ্দেদী, মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম, অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সভাপতি জিএম শাহাদাত হোসাইন মানিক, লোকমান হোসেন মিয়াজী, মাওলানা ফখরুজ্জামান খান প্রমূখ।
সমাবেশ শেষে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আহলে সুন্নাতের চেয়ারম্যান শাইখুল হাদিস আল্লামা কাজী মঈনুদ্দিন আশরাফীর নেতৃত্বে গণমিছিল বের করা হয়। মিছিলে স্লোগান দেয়া হয়, ম্যাখোঁর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে, ম্যাখোঁর চামড়া তুলে নিবো আমরা’ ফ্রান্সের পণ্য বর্জন করো করতে হবে’। গণমিছিল থেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। কড়া পুলিশি পাহারায় গণমিছিলটি বায়তুল মোকাররম উত্তরগেট থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়, বিজয়নগর, কাকরাইল, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে আবার বায়তুল মোকাররমে গিয়ে মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি কামনা করে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।