বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন
মুহিউদ্দিনকে অনেক বুজুর্গগণ ‘দ্বীনের ডুবন্ত জাহাজ উদ্ধারকারী’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। কারণ মুহিউদ্দিন উপাধি তো এমনি এমনি পাওয়া যায় না। চলার পথের মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তিকে টগবগে নওজোয়ানে পুনরায় জীবিত করলেই তো মুহিউদ্দিন হওয়া যায়।
৪৭০ হিজরীর কথা, রসুলে পাকের জন্মের পাঁচশত বছর পূর্ণ হতেই তার ভবিষ্যদ্বাণী অনেকটা প্রমাণিত। অর্থাৎ ৭২ টি ফেরকা তখনই পরিপূর্ণ।রাসুলে পাকের ইসলামে চরম ক্রান্তি চলছে। ফেৎনা ফ্যাসাদে লিপ্ত হয়ে উম্মাহ তখন দ্বীনের সঠিক রাস্তা থেকে অনেক দূরে। আর সেই ক্রান্তিলগ্নেই গাউসে পাকের শুভাশিষ আগমন। ছোট্ট বেলা এমনকি জন্মমূহুর্ত থেকেই নানা কারামতে জগৎ বাসীকে ধন্য করে গাউসে পাক আবারও মুসলিম উম্মাহকে ইসলামের সুশীতল পথে ফিরিয়ে আনেন। উপহার দিলেন একটি সুন্দর ত্বরিকা।
গাউসে পাক এমনই, যেকোনো সংকটের মূহুর্তে ত্বরণকারী রূপে আবির্ভূত হন। হোক তা দ্বীনের সংকট কিংবা কোনো প্রাণের। উম্মাহর যেকোনো সংকট ত্বরানো এটাই গাউসে পাকের আদর্শ।
আর গাউসে পাকের সেই আদর্শেরই একটা জিন্দা নিশানার নাম আজকের “গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ”। কিভাবে সেই আদর্শ? কোথায় তার প্রতিফলন? তার উত্তর একটু পরে দিচ্ছি। শুরুতেই গাউসিয়া কমিটির পরিচয় জানুন….
গাউসে পাক মুহিউদ্দিন শায়খ আবদুল কাদের জিলানীর আধ্যাত্মিক প্রতিনিধি পরম্পরায় সুযোগ্য প্রতিনিধি গাউসে জামান হাফেজ ক্বারী আল্লামা তৈয়্যব শাহ (রহঃ)’র নূরানি নির্দেশে ১৯৮৬ সনে গাউসিয়া কমিটির পদচারণা। সংগঠনের নামটাও হয়েছে গাউসে পাকের বরকতময় নামের সাথে মিলিয়ে “গাউসিয়া”। গাউসে পাকের আদর্শেই, হুজুর কেবলা আলমের রূহানী নেতৃত্বে এ সংগঠনের পতাকা প্রতিনিয়তই উড্ডীন রয়েছে। আওলাদে রাসুলের রূহানিয়্যতের প্রভাবেই একের পর এক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে দ্বীন, মাযহাব, মিল্লাত এবং মানবতার কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে যাচ্ছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ।
এবার আসি সেই আদর্শের প্রমাণে, খুব বেশি দেরীর কথা নয়। করোনা মহামারীর শুরুর দিকটায়। বাবা-মা মারা গেলে সন্তান ছেড়ে যাচ্ছিলো। সন্তান মারা গেলে বাবা- মা ছেড়ে যাচ্ছিলো। ভাই,বোন,বন্ধু আপন বলতে তখন কেউই কারোর না। ইন্টারনেটের কল্যাণে আমরা সারা বিশ্বব্যাপী এই নিঠুরতার দৃশ্য দেখেছি। দেখেছি কিভাবে একটি লাশের গায়ে শিকল বেড়ি বেধে কবরস্থ করা হচ্ছিল। এই যে একটা সংকট শুরু হলো, তখনই গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ সকলের আপন হয়ে পাশে দাড়ালো। সংকট নিরসন। কোন মুসলিম উম্মাহর গোসল, দাফন-কাফন ছাড়া শেষযাত্রার ভয় রইল না। এই যে সংকট মূহুর্তে উম্মাহর খেদমতে এগিয়ে এসে উম্মাহর সংকট নিরসন করলো, এইটাই তো গাউসে পাকের সেই আদর্শের নগদ প্রতিফলন।
ও হ্যা! শুধু মুসলিম উম্মাহর জন্যেই নয় এই সংকট ছিল হিন্দু,বৌদ্ধ সহ সকল মানুষের জন্যই। তো তাদের ও তো শেষযাত্রা, তারা!! গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ তাদের জন্যেও উদ্ধাকারী, সাহায্যকারী রূপে আবির্ভূত হয়েছে। এটাই সত্যিকার অর্থে মানবতা। তথাকথিত মানবকল্যাণ নয়। এটাও তো গাউসে পাক মুহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানীর আদর্শ। এটা ছিল গাউসে পাকের আদর্শের মারফতি ঢঙ্গ।
শুধু যে লাশ দাফন তা নয় কারো মুখে একটা খাবারের লোকমা তুলে দিয়ে, রাত ২.৩০ টা বা ৩ টা কিংবা হোক ভোর ৫ টা দেশের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে এম্বুল্যান্স সেবার মাধ্যমে যে খেদমতের আনজাম শাহেনশাহে সিরিকোটির রূহানি সন্তানেরা দিয়ে যাচ্ছেন তা সারা বিশ্বের কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এবার নিজের কিছু উপলব্ধি বলি,,
এমন কিছু এলাকা দেখেছি, যেখানে একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্টানের, একটি মাদ্রাসার বড় প্রয়োজন হচ্ছে। মাদ্রাসা দেওয়ার মতো সামর্থ্যবান ইচ্ছুক ব্যক্তি থাকলেও দেখাশোনা কিংবা দায়িত্ব নেয়ার মতো কেউ নেই। সেইখানেও একমাত্র ভরসা হিসেবে গাউসিয়া কমিটিকেই পেতে দেখেছি। ত্বরিকতের খানেকা সহ মাযহাব মিল্লাতের এমন অনেক খেদমত গাউসিয়া কমিটির মাধ্যমে প্রতিনিয়তই চলছে।
গাউসিয়া কমিটির আরও একটি মহৎ উদ্দেশ্য হচ্ছে “আত্মশুদ্ধি”। আমার আশেপাশের এমন অনেককেই দেখেছি, গাউসিয়া কমিটির সংস্পর্শে এসে নিজের অতীতের ভুল ত্রুটি থেকে নিজেকে বের করে পরিশুদ্ধ সুন্দর ইসলামি জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েছে, হচ্ছে। তাসাউফের ভাষ্যে বললে, নিজের ক্বলবকে পরিষ্কারের জন্য হক্কানি পীরের রূহানিয়্যতের প্রয়োজন। আমি মনে করি, গাউসিয়া কমিটির মাধ্যমে আওলাদে রাসুলের রূহানিয়্যতের সংস্পর্শে এসে আত্মশুদ্ধি সম্ভব।
এভাবেই গাউসে পাকের আদর্শে কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে হুজুর কেবলা আল্লামা তৈয়্যব শাহ (রহঃ)’র এই রূহানি মিশন। ইনশাআল্লাহ।
তাই যে যাই বলুক, নিজের মতো করে একবার চিন্তা করুন। সাথে থাকুন গাউসিয়তের এই কাফেলার সাথে।
“তৈয়্যব শাহা মুর্শিদ আমার সুলতানে জাহান
শেষ জামানায় উদয় হলো পূর্ণিমারই চান”
কাজী হায়াত, ছাত্র।