বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৭ অপরাহ্ন
ইসলামাবাদ, ২১ ফেব্রুয়ারি :
ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহান শহিদ দিবস
ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন করেছে। এ উপলক্ষ্যে দূতালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর
কালোব্যাজ ধারণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে উত্তোলন, অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ,
এক মিনিট নীরবতা পালন, বাণীপাঠ, আলোচনা, ভিডিওচিত্র প্রদর্শন ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এ
উপলক্ষ্যে দূতালয় প্রাঙ্গণ শহিদ দিবসের ব্যানার, বাংলা বর্ণমালা ও ভাষা দিবসের পোস্টারে সুসজ্জিত
করা হয়।
হাইকমিশনার মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে শহিদ
মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর
ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে হাইকমিশনারের সভাপতিত্বে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী,
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। আলোচনা পর্বে হাইকমিশনের
কর্মকর্তাগণ ভাষা আন্দোলনে ভাষা শহিদ ও ভাষা সৈনিকদের গৌরবোজ্জ্বল অবদানের কথা ও দিনটিকে
ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দানের বিষয়ে আলোচনা ও এর
তাৎপর্য তুলে ধরেন।
হাইকমিশনার মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী তার বক্তৃতায় বাহান্নর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষা
বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন
করেন। তিনি বলেন, আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম ও এক
অবিস্মরণীয় ঘটনা। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক একটি
রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্ব দেন ও
বারবার কারাবরণ করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মাতৃভাষার অধিকার আন্দোলন জোরদার হয় ও ১৯৫২
সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউদ্দিনসহ আরও অনেকের আত্মত্যাগের
বিনিময়ে তা চূড়ান্ত রূপ পায়। পরবর্তীতে অমর একুশের অবিনাশী চেতনাই বাঙালিদের যুগিয়েছে স্বাধিকার,
মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস। হাইকমিশনার আরও বলেন, স্বাধীন
বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সকল দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন এবং
সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেন। বঙ্গবন্ধু বাংলায় জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা
দিয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। বাঙ্গালি জাতির এই মাতৃভাষার
অধিকার আন্দোলনই সারা বিশ্বের সকল ভাষাভাষীর জন্য ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে
স্বীকৃতি লাভ করে।
হাইকমিশনার আরো উল্লেখ করেন, যারা একসময় আমাদের ভাষাকে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিলো সেই
ইসলামাবাদের পাকিস্তান একাডেমি অভ্ লেটারস (PAL), ইন.এন.ডি.পি, সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের সংস্কৃতি
বিভাগের উদ্যোগে তিনদিনব্যাপী পাকিস্তান মাতৃভাষা সাহিত্য উৎসবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
পালিত হচ্ছে।
হাইকমিশনার ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যার যার অবস্থানে থেকে
একযোগে কাজ করে জাতির পিতার স্বপ্নের প্রগতিশীল, প্রযুক্তিভিত্তিক, উন্নত, সমৃদ্ধ ও
আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকলকে আহ্বান জানান ।
আলোচনা পর্বের পর শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর নির্মিত একটি
প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির
সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।