বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
সিপাহী বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে মুলাদীর সোনামদ্দিন বন্দরে বিএনপির আলোচনা সভা মুলাদীর চর বাটামারা জমির দখল পাচ্ছে না খোরশেদা আক্তার ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ২০২৪ এর পুনর্জন্ম : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের সাথে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সাক্ষাৎ মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে মুক্তি চায় আলি আকবার পরিবারবর্গ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে : উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অর্ন্তবর্তী সরকারের অন্যতম কাজ শহীদ পরিবারকে সহায়তা ও আহতদের পরিপূর্ন চিকিৎসা : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা আবারো এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব হলেন সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক যৌথ অভিযানে ভোলায় অস্ত্রসহ দুই ডাকাত আটক নারীর প্রতি সহিংসতা সামজিক ব্যাধি দুর করতে হবে : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

পোশাক খাতে কালো মেঘ

* রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের অর্থনীতিকে টালমাটাল করে দিয়েছে
* বাংলাদেশের রফতনি খাতে কালো মেঘ দেখছেন অর্থনীতিবিদরা
* বাংলাদেশে মোট পোশাক রফতনির ৫৬ শতাংশ যায় ইউরোপে
* সংকট মোকাবেলায় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই বছর আগে ‘অতিমারি করোনা’ শুরু হওয়ার পর বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। বেশির ভাগ দেশে সংকুচিত হয় অর্থনীতি। এর পর আস্তে আস্তে তা ঘুরে দাঁড়ায়। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইউক্রেন-রাশিয়া চলমান যুদ্ধের কারণে সামনের দিনে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটা মন্দাভাব আসতে পারে। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে। এতে করে বাংলাদেশের রফতনি খাতে আবারও কালো মেঘ দেখছেন তারা।

অর্থনীতিবিদরা ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উজ্জ্বল সম্ভাবনার আভাস দিয়েছিল। কিন্তু সব ছক বদলে দিয়েছে গত ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এ যুদ্ধ সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে আবারও টালমাটাল করে দিয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইউক্রেন-রাশিয়া চলমান যুদ্ধের কারণে সামনের দিনে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা মন্দাভাব আসতে পারে। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে। এতে করে বাংলাদেশের রফতনি খাতে আবারও কালো মেঘ দেখছেন তারা।

মন্দা নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন, এর প্রভাবে এরই মধ্যে ইউরোপের বাজারে ২০ শতাংশ পোশাক পণ্যের আদেশ কমে গেছে। বাংলাদেশে মোট পোশাক রফতনির ৫৬ শতাংশ যায় ইউরোপের দেশে।

২০০৯-এর শুরুর দিকে বহু দেশ মন্দার কবলে পড়ে। ২০০৮ সালের শেষ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা দেখা দেয়। তখন বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছিল।

বিশ্বব্যাপী মন্দার স্বীকৃত কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে অর্থনীতির সংজ্ঞায় পর পর দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হলে তাকে মন্দা বলা যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, বিশ্ব অর্থনীতির বিকাশ যখন ৩ শতাংশের কম হয়, তখন সেই পরিস্থিতিকে বৈশ্বিক মন্দা বলা যায়।

ওয়াশিংটনভিত্তিক বহুজাতিক এই সংস্থার মতে, প্রতি আট থেকে ১০ বছর অন্তর বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দেয়। গত তিন দশক ধরে আইএমএফ যে তিনটি মন্দাকে বিশ্বমন্দা আখ্যা দিয়েছে, সেই ক্ষেত্রগুলোতে বিশ্বজুড়ে মাথাপিছু উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল শূন্য বা ঋণাত্মক। সবশেষ বিশ্বমন্দা ঘটে ২০০৮-২০০৯ সালে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার প্রভাবে প্রধানত ঋণ সংকোচন ও উৎপাদন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। ফলে অর্থনীতির প্রসার বাধাগ্রস্ত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় কর্মহীনতা। মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি প্রকট আকার ধারণ করে।

যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিশেষ করে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ববাজারে এ দুটি পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে। বেড়ে যায় উৎপাদন খরচ। শুধু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ নয়, ইউরোপ-আমেরিকার মানুষও জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে।

এর প্রভাবে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান চাপে অসহায় হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে।

আপাতত মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে বিশ্বের প্রায় সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়িয়েছে। এতে অর্থের প্রবাহ কমে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি বছর বিশ্বের বেশ কয়েকটি বড় অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়বে।

অত্যাসন্ন বিশ্বমন্দা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা। একপক্ষ বলছেন, যুদ্ধের কারণে ইউরোপ মন্দায় চলে যাবে। কারণ চলমান যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ইউরোপ। এর বাইরে অন্যদেশগুলোতে মন্দা নাও হতে পারে। তবে কমে যাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার।

অন্যপক্ষের মতে, বিশ্বমন্দা হলে সব দেশই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বড় অর্থনীতির দেশে মন্দা না হলেও জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব তেল থাকার কারণে যুদ্ধের প্রভাব অতটা লাগেনি।

চীনের বিষয়টি ভিন্ন। কোভিডের কারণে লকডাউন চলছে সেখানে। ফলে দেশটির প্রবৃদ্ধিতে চলছে শ্লথগতিতে। গত তিন প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ শতাংশের কম।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর নির্ভরশীল। ফলে এই অঞ্চলের অর্থনীতি মন্দার সম্ভাবনা কম। তবে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।

অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশা, মন্দার কবলে পড়বে না বাংলাদেশ। আমাদের রফতনি ভালো। অর্থনীতি স্থিতিশীল। ফলে তেমন ঝুঁকি নেই। তবে প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। কারণ বাংলাদেশ হচ্ছে ইউরোপের বড় বাজার। সেখানে মন্দার কারণে রফতানি আয়ের বড় খাত পোশাক রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে একেক দেশের পরিস্থিতি একেক রকম হবে। তবে সব দেশেই প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো দেশে মন্দা দেখা দেবে। আবার কোনো দেশে হয়তো নাও হতে পারে। এটা নির্ভর করবে মন্দা মোকাবিলায় দেশগুলোর সক্ষমতা এবং কী ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া হচ্ছে, তার ওপর।’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. জায়েদ বখত মনে করেন, মন্দার ঝুঁকি আছে সারা বিশ্বে। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সংকোচনমূলক নীতি নিচ্ছে। ফলে বিশ্বমন্দার একটা আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশে কী প্রভাব পড়বে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্বমন্দা হলে সব দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশেও এর বাইরে নয়। এটি মোকাবিলায় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে হবে। অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে, সে জন্য সরকারি ব্যয় বাড়াতে হবে।’

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নোমুরার প্রধান অর্থনীতিবিদ রব সুব্বারমন সিএনবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শিগগির দীর্ঘমেয়াদি মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে। ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে টানা পাঁচ প্রান্তিকে এই মন্দা অনুভূত হবে, যদিও এবারের মন্দা অতটা গভীর হবে না বলেই তার মত। যুক্তরাজ্যও বছরের শেষ প্রান্তিকে মন্দার কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে সে দেশের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস।

সংবাদ সংস্থা সিএনবিসির জরিপে জানা গেছে, ৮১ শতাংশ আমেরিকান নাগরিক মন্দার আশঙ্কা করছেন। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নাগরিকের বিশ্বাস, অর্থনীতি একটি মন্দার মধ্যে পড়েছে। গত মাসে সিভিক সায়েন্স নামক এক সংস্থার জরিপে উঠে আসে এ জনমত।

নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ইউরোপে এরই মধ্যে মন্দা শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে আমাদের পোশাক পণ্য পরবর্তী প্রান্তিকের জন্য প্রায় ২০ শতাংশ আদেশ (অর্ডার) কমে গেছে। পরিস্থিতি উত্তরণে দুটি চালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। গ্যাসসংকটের দ্রুত সমাধান করা এবং ডলার বাজার স্থিতিশীল রাখা।’

রফতানি ধরে রাখতে হলে ডলার কেনা-বেচার পার্থক্য সর্বোচ্চ ১ থেকে দেড় টাকার মধ্যে রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিষয়ে জরুরি হস্তক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

কাগজের সংবাদ/মেহেদী হাসান

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 ithostseba.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com