বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্পর্কের জেরে প্রায়শই নারীদের হয়রানির অভিযোগ ওঠে। এমন হয়রানি সম্প্রতি আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশের ‘সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন‘ উইং বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীরাও নারীদের হয়রানি করছে। মূলত নিজেদের স্বার্থের দ্বন্দ্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নারীরাও নারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছেন।
পুলিশের ‘সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন‘ উইংয়ে আসা অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে কর্মকর্তারা অন্তত ১০ শতাংশ ঘটনায় নারীদের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। তারা আরও বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির ঘটনাগুলোতে ৩৬ ভাগ পুরুষ ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে নারীদের কাছে টাকা চেয়ে থাকে।
উইংয়ের তথ্য বলছে, নারীর প্রতি সাইবার হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্তদের ৫৩ শতাংশ ২৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। আর তাদের ৭৭ শতাংশই ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সী। অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে শিক্ষার্থী বা ছাত্রের সংখ্যাই বেশি। নারীর বিরুদ্ধে সাইবার হয়রানির অন্তত ১০ শতাংশ ঘটনায় নারী অভিযুক্ত পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বই এসব হয়নির মূল কারণ হিসেবে তদন্তে উঠে এসেছে।
‘সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন‘ উইংয়ের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর চালু হওয়া এই উইংয়ে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ এসেছে ৩১ হাজার ১৭৮টি। ফেক আইডি, আইডি হ্যাক, ব্ল্যাকমেইলিং, মোবাইল হ্যারাজমেন্ট, আপত্তিকর কনটেন্ট ছড়ানো এবং অন্যান্য বিষয়সহ ছয়টি ক্রাইটেরিয়ায় ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ আসে ২২ হাজার ৩০৪টি। ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে তথ্যগত পরিবর্তন এনে অভিযোগের আটটি ধরন করা হয়। অভিযোগের ধরন হিসেবে ডক্সিং, ইমপারসোনেশন, আইডি হ্যাক, ব্ল্যাকমেইলিং, সাইবার বুলিং, আপত্তিকর কনটেন্ট ছড়ানো, মোবাইল হ্যারাজমেন্ট ও অন্যান্য— এই আটটি বিভাগে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ এসেছে ৮ হাজার ৮৭৪টি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইন্টারনেট ব্যবহার করে কারও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার প্রক্রিয়াকে ডক্সিং বলা হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়া পজিটিভ ও নেগেটিভ দুইভাবেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডক্সিং করে কারও তথ্য সংগ্রহ করে হয়রানি করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগগুলোকেই ‘সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন‘ উইং ‘ডক্সিং‘ ক্রাইটেরিয়ায় ফেলেছেন। আর ভুক্তভোগীর ছবি, নাম, বা যেকোনও পরিচিতি তথ্য ব্যবহার করে ভুক্তভোগী সেজে ছদ্মবেশে হয়রানির অভিযোগগুলো এই ক্রাইটেরিয়ায় ফেলেছে উইংটি।
তারা আরও জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগীর বিভিন্ন পোস্টে আপত্তিকর ভাষায় কমেন্ট করা বা মেসেজ করা, পর্নোগ্রাফিক ছবি বা ভিডিও পাঠানো সাইবার বুলিং। আর আপত্তিকর বা ব্যক্তিগত কোনও ছবি কিংবা ভিডিও পাঠিয়ে অর্থ বা কোনও সুবিধা দাবি করা সাইবার স্পেসে ব্ল্যাকমেইলিং। এছাড়া ভিডিও কলে আসতে বলা বা আপত্তিকর ভাষায় চ্যাট করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি দেওয়াও এই ক্যাটাগরির হয়রানি।
পুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন উইংয়ের এআইজি মুনতাসিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশেষ করে নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস বিনির্মাণে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিগত সহায়তাসহ জিডি, মামলা, উপযুক্ত আইনি প্রক্রিয়ার পরামর্শ এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া চলমান রয়েছে। এছাড়া তদন্ত কাজে পুলিশের অন্যান্য ইউনিটকে তথ্য-প্রযুক্তিগত সহযোগিতাও করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতরের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফেসবুক পেজে মেসেঞ্জার, হটলাইন নম্বর এবং ই-মেইলে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেকেই একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন। ফলে তালিকাভুক্ত সেবাপ্রার্থীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৪০৮ জন। সেবাপ্রত্যাশীদের মধ্যে ৩১ হাজার ১৭৮ জন নারী সাইবার স্পেসে হয়রানির বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন। তাদের মধ্যে ১০ হাজার ৯৭০ জন পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯ হাজার ৪৫১ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৭১৭ জনের অভিযোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সাইবার সেন্টার ফর উইমেন এলআইসি শাখার অভিযোগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এসেছে সাইবার স্পেসে ডক্সিং-এর অভিযোগ। এ সংখ্যা ৩ হাজার ৩৩৪টি; যা মোট অভিযোগের ৩৮ শতাংশ। আইডি হ্যাক সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে ১ হাজার ৭১৫টি; যা মোট অভিযোগের ১৯ ভাগ। ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ এসেছে ১ হাজার ৪৮৮টি; শতকরা ১৭ ভাগ। সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ এসেছে ৬৬৭টি; যা মোট অভিযোগের ৭ ভাগ।