রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
নাজির পুরে ধান ক্ষেতের সীমানা নিয়ে কথা কাটাকাটিতে মারামারি ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন চৌধুরী ও তার পরিবারের নামে অপপ্রচারের অভিযোগে থানায় জিডি ‘ন্যায়বিচার ও নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় দর্শনের শিক্ষা জরুরি’ সিপাহী বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে মুলাদীর সোনামদ্দিন বন্দরে বিএনপির আলোচনা সভা মুলাদীর চর বাটামারা জমির দখল পাচ্ছে না খোরশেদা আক্তার ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ২০২৪ এর পুনর্জন্ম : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের সাথে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সাক্ষাৎ মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে মুক্তি চায় আলি আকবার পরিবারবর্গ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে : উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অর্ন্তবর্তী সরকারের অন্যতম কাজ শহীদ পরিবারকে সহায়তা ও আহতদের পরিপূর্ন চিকিৎসা : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট্ট রাসেলকে নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন

শিশু শেখ রাসেল ও তার বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর রাসেলের জন্ম হয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় আমার শোয়ার ঘরে। দোতলা তখনও শেষ হয়নি। বলতে গেলে মা একখানা করে ঘর তৈরি করেছেন। একটু একটু করেই বাড়ির কাজ চলছে। নিচতলায় আমরা থাকি। উত্তর-পূর্ব দিকের ঘরটা আমার ও কামালের। সেই ঘরেই রাসেল জন্ম নিলো রাত দেড়টায়। রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা কাকা বাসায়। বড় ফুফু ও মেজো ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার এবং নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আর জেগে ওঠে। আমরাও ঘুমে ঢুলঢুলু চোখে জেগে আছি—নতুন অতিথির আগমনবার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেজো ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা।’

২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট্ট রাসেল সোনাকে নিয়ে নিজে এই অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। আজ শেখ রাসেলের জন্মদিন। তার সম্ভাবনার বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর অনুভূতিতে বারবার ফিরে আসে। কারণ, রাসেল তার সামনে জন্মে বড় হয়ে উঠছিল।

কীভাবে রাসেল নামটি এলো সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী লেখেন— আমাদের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রাসেল। অনেক বছর পর একটা ছোট বাচ্চা আমাদের ঘর আলো করে এসেছে, আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। আব্বা বার্ট্র্যান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন, রাসেলের বই পড়ে মাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। মা রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত ভক্ত হয়ে যান যে নিজের ছোট সন্তানের নাম রাসেল রাখলেন। ছোট্ট রাসেল আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। মা রাসেলকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সংসারের কাজ করতেন, স্কুল বন্ধ থাকলে তার পাশে শুয়ে আমি বই পড়তাম। আমার চুলের বেণী ধরে খেলতে খুব পছন্দ করতো ও। আমার লম্বা চুলের বেণীটা ওর হাতে ধরিয়ে দিতাম। ও হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে হাসতো।

ছোট ভাইকে হারাতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ১৯৭৫ সালে ঘাতকেরা ছোট্ট রাসেলকেও রেহাই দেয়নি। মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিল রাসেল, শেষ সময়ে। তার শেষ ইচ্ছে পূরণ হয়নি। সেই রাসেলের প্রথম হাঁটার স্মৃতি উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর লেখায়। তিনি লিখেছেন, একদিন আমার হাত ধরে হাঁটছে। ওর যেন হাঁটার ইচ্ছা খুব বেড়ে গেছে। সারা বাড়ি হাত ধরে ধরে হাঁটছে। হাঁটাতে হাঁটতে পেছনের বারান্দা থেকে সামনের বারান্দা হয়ে বেশ কয়েকবার ঘুরলো। এই হাঁটার মধ্যে আমি মাঝে মাঝে চেষ্টা করছি আঙুল ছেড়ে দিতে, যাতে নিজে হাঁটতে পারে। কিন্তু সে বিরক্ত হচ্ছে, আর বসে পড়ছে, হাঁটবে না আঙুল ছাড়া। তার সাথে হাঁটতে হাঁটতে আমি বরাবরই চেষ্টা করছি যদি নিজে হাঁটে। হঠাৎ সামনের বারান্দায় হাঁটতে হাঁটতে আমার হাত ছেড়ে নিজে হাঁটতে শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতে চলছে। আমি পেছনে পেছনে যাচ্ছি। সেই প্রথম হাঁটা শুরু করলো। আমি ভাবলাম কতটুকু হেঁটে আবার আমার হাত ধরবে। কিন্তু যতই হাঁটছি দেখি আমার হাত আর ধরে না, চলছে তো চলছেই, একেবারে মাঝের প্যাসেজ হয়ে পেছনের বারান্দায় চলে গেছে। আমি তো খুশিতে সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করেছি যে, রাসেল সোনা হাঁটতে শিখে গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর লেখায় ফুটে উঠে ওইটুকু বয়সের রাসেলের মধ্যে যে মায়ার সত্তা ছিল। শেখ হাসিনা লিখেছেন রাসেলের কবুতরের মাংস না খাওয়ার গল্প— আমাদের বাসায় কবুতরের ঘর ছিল। বেশ উঁচু করে ঘর করা হয়েছিল। অনেক কবুতর থাকতো সেখানে। মা খুব ভোরে উঠতেন, রাসেলকে কোলে নিয়ে নিচে যেতেন এবং নিজের হাতে কবুতরদের খাবার দিতেন। রাসেল যখন হাঁটতে শেখে তখন নিজেই কবুতরের পেছনে ছুটতো, নিজে হাতে করে তাদের খাবার দিতো। আমাদের গ্রামের বাড়িতেও কবুতর ছিল। কবুতরের মাংস সবাই খেতো। বিশেষ করে বর্ষাকালে যখন অধিকাংশ জমি পানির নিচে থাকতো, তখন তরকারি ও মাছের বেশ অভাব দেখা দিতো। তখন প্রায়ই কবুতর খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। সকালের নাস্তার জন্য পরোটা ও কবুতরের মাংস ভুনা সবার প্রিয় ছিল। তাছাড়া কারও অসুখ হলে কবুতরের মাংসের ঝোল খাওয়ানো হতো। ছোট ছোট বাচ্চাদের কবুতরের স্যুপ করে খাওয়ালে রক্ত বেশি হবে, তাই বাচ্চাদের নিয়মিত কবুতরের স্যুপ খাওয়াতো। রাসেলকে কবুতর দিলে কোনও দিন খেতো না। এত ছোট বাচ্চা কীভাবে যে টের পেতো কে জানে। ওকে আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেছি। ওর মুখের কাছে নিলেও খেতো না।

সেই শিশুটি বড় হয়েছিল রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসনের শিক্ষক ড. জেবউননেছার লেখায় পাওয়া যায় সেই চিত্র। তিনি লিখছেন, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাড়ির বারান্দা থেকে মিছিল দেখে রাসেল বলতো ‘জয় বাংলা’। পুলিশ দেখলে বলতো ‘ও পুলিশ কাল হরতাল’। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ তাদের বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা গুলি করলে—সে গুলি শেখ রাসেলের পায়ের কাছে এসে পড়ে। তিনি বেঁচে যান। ছোট শিশুটি ১৯৭১-এর যুদ্ধে মায়ের সঙ্গে গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। আকাশে মেঘের মতো এয়ার রেইডের শব্দ হলে তুলো নিয়ে বোনের ছেলে জয়ের কানে গুজে দিতো। পাকসেনাদের অস্ত্র পরিষ্কারের পদ্ধতি জানালা দিয়ে দেখতে দেখতে একসময় অস্ত্রের নাম শিখে ফেলেছিলেন। ১৯৭১’র বিজয়ের দিন রাসেল এবং তার চাচাতো ভাই টিটো দুজন হেলমেট পরে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলেছিল। যে ছবি এখনও জীবন্ত। বন্দিদশা থেকে বাবা মুক্ত হয়ে যেদিন আসেন, সেদিন দাদার হাত ধরে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন বাবাকে আনতে। তবে রাসেল অভ্যস্ত ছিল বাবাকে না পেতে পেতে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 ithostseba.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com