শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১২ অপরাহ্ন
চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামে জমি বেচাকেনা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে এক দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযুক্ত মোঃ মহিউদ্দিন ও তার স্ত্রী জুনফার রায়হান পারস্পরিক যোগসাজশে একজনের সাথের সাথে রেজিস্টার্ড বায়না করে একই জমি গোপনে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার এমইউ সাক্ষর করে বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদিন ও তাঁর স্ত্রী রিজোয়ান কবির আঁখি।
জয়নাল আবেদিন গণমাধ্যমকে বলেন, পূর্ব পরিচয় সূত্রে বিপুল আর্থিক ঋণ গ্রস্থ মোঃ মহিউদ্দিন (পিতা- মনজুর আলম, ৬২/৩ পূর্ব নাছিরাবাদ হাউজিং, পাঁচলাইশ চট্টগ্রাম) আমার কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য আসেন৷ ঐ সময় মহিউদ্দিন অর্থ না পেলে জেলে যাবেন এমন অবস্থা ছিল। এমন পরিস্থিতিতে আমি ও আমার স্ত্রী যৌথভাবে নাছিরাবাদ এলাকার সাবেক ব্রিটিশ কাউন্সিল ভবনটি মধ্যে ৬.৮০ শতক জমি গত ১১ মে ২০২৩ ইং তারিখে চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ৭০৮৬ নং বায়না নামা দলিলে চুক্তিবদ্ধ হই। সেই দলিলে মহিউদ্দিনের স্ত্রীও সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থেকে সাক্ষর করেন৷
আমার কাছ থেকে জমি বায়নার অর্থ পেয়ে জেলে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার পর মহিউদ্দিন আমাদের বায়না দলিলের বিষয়টি গোপন রেখে উক্ত জমিটি অন্যত্র বিক্রির পাঁয়তারা শুরু করে৷ আমরা জানতে পেরেছি জুমাইরা নামের একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সাথে মহিউদ্দিন জমিটির বিষয়ে প্রাথমিক চুক্তি করে ফেলেছে৷ বিষয়টি আমরা জুমাইরা কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছি। আমি অন্য কারো জমি চাই না, অন্তত আমি যেটুকু জমির বায়না করেছি সেই জমিটি বায়না চুক্তি মোতাবেক আমি রেজিস্ট্রি নিতে চাই। কারণ এই জমিতে আমার বিপুল অর্থ বিনিয়োগের পাশাপাশি এত দিনের নানা পরিকল্পনা ও স্বপ্ন জড়িয়ে গেছে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত মহিউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে প্রথমে বলেন, বিষয়টি সুরাহা হয়ে গেছে। তবে আজই (১৯ অক্টোবর) ভুক্তভোগী এই মর্মে অভিযোগ তুলেছেন উল্লেখ করলে তিনি সুর পালটে বলেন, “আমি দুই দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে ফেলবো৷” একটু আগেই বললেন সমাধান হয়ে গেছে এখন বলছেন দুই দিনের মধ্যে করে ফেলবো এমন দুই রকম বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিবেদক পালটা প্রশ্ন করলে এবার মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, “আমি উনার (ভুক্তভোগী) কাছে দুই দিনের সময় চেয়েছি।” ভুক্তভোগীর সাথে বায়না দলিলের বিষয়টি মহিউদ্দিন স্বীকার করলেও অন্য আর কারো সাথে তিনি কোন চুক্তি করেননি বলে জানান৷ তবে ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদিন অভিযুক্ত মহিউদ্দিনের দুই দিনের সময় নেয়ার বিষয়টি আরেকটি মিথ্যাচার উল্লেখ করে বলেন, “মহিউদ্দিন ও তার স্ত্রী সুপরিকল্পিত ভাবে প্রতারণার চেষ্টা চালাচ্ছে ৷
সম্প্রতি আমরা আরো জানতে পারি মহিউদ্দিন আমাদের সাথে চুক্তির আগে গোপনে তার স্ত্রী জুনফার রায়হানকে জমিটি হেবা করলেও নাম জারি করায়নি। ফলে খতিয়ানে মহিউদ্দিনের নামেই জমিটির মালিকানা ছিল, সেটা দেখেই আমরা মহিউদ্দিনের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হই। অথচ আমাদের সাথে বায়না দলিল রেজিস্ট্রির সময় মহিউদ্দিনের স্ত্রী জুনফার রায়হান সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সাক্ষী হিসেবে সাক্ষর করেন৷ এটাও বড় রকমের প্রতারণা। এসব জানার পর আমরা বুঝতে পারছি তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে কৌশলে আমাদের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করছে তাই আমার আইনজীবীর মাধ্যমে পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি।
ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদিন আরো বলেন, “একটি স্বনামধন্য ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান আমার বায়নাকৃত জমি জেনেও যদি সেই জমি নিতে চায় তাহলে মানুষ যাবে কোথায় ? আমি আপনাদের সকল গণমাধ্যমের মাধ্যমে এই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি৷ শীঘ্রই আমি আরো আইনি ব্যবস্থা নিব।”
এদিকে এই বিষয়ে জুমাইরা হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা মোঃ মহিউদ্দিনের কাছ থেকে নেইনি৷ আমরা দলিল যার জমি তার এই বিষয়টি জেনে সব যাচাই বাছাই করেই সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি৷” ভুক্তভোগীর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জেনেছি এবং ইতোমধ্যেই এর পালটা প্রতিবাদ দিতে জমির মালিক ও সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নিয়েছেন৷” নিজেদের নগর উন্নয়নের অংশীদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ১৫ গন্ডা জায়গা নিয়েছি যদি কারো জমির অংশে জটিলতা থাকতো তাহলে সেই সাড়ে তিন গন্ডা জমি না নিলেও আমাদের প্রজেক্ট করা যেতো।