শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি-জামায়াত চক্র) সরকারকে ব্যর্থ করতে নেমেছে। তারা কীভাবে সরকারকে পতন করবে? গোপন হামলার মাধ্যমে? চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে সরকারের পতন করা সম্ভব হবে না।’
রবিবার (১২ নভেম্বর) বিকালে নরসিংদীতে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার (জিপিইউএফএফ) উদ্বোধন উপলক্ষে মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। সমাবেশ শুরুর আগে নরসিংদীবাসীর জন্য উপহার উল্লেখ করে ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পও উদ্বোধন করেন তিনি।
ওরা চায় না যে মানুষ শিক্ষিত হোক
আওয়ামী লীগ সরকার সাক্ষরতার হার ৪৪ ভাগ থেকে ৭৬ দশমিক ৬ ভাগে ভাগে উন্নীত করেছে এবং খালেদা জিয়াসহ জিয়া পরিবারের ব্যক্তিগত শিক্ষাদীক্ষার ইতিবৃত্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরা চায় না যে মানুষ শিক্ষিত হোক। ওরা চায় না আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখুক। তাই, আজ এই নভেম্বর মাস, সামনে ইলেকশন। আগেভাগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা সম্পন্ন হবে, সে ব্যবস্থা যখন নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি দিচ্ছে অবরোধ, হরতাল আর পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছে। সামনে আসার সাহস নাই। অলি-গলি থেকে বের হয়ে বাসের ভেতর, স্কুটারে, অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিচ্ছে। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করছে, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা মহিলা যে অ্যাম্বুলেন্সে সেটাও পুড়িয়ে দিচ্ছে।
পুলিশের ওপর হামলা ও পিটিয়ে পুলিশ হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা এবং পুলিশ, হাসপাতালে হামলা ও অগ্নিসংযোগকে তিনি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন। এসব ঘটনাকে তিনি ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসন এবং নিরীহ নারী ও শিশু হত্যার সঙ্গে তুলনা করেন।
অগ্নিসন্ত্রাসী যাকে যেখানে পাবেন তাকে আগে ধরেন
শেখ হাসিনা বলেন, এই বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আপনারা যুগ যুগ ধরে দেখেছেন, কীভাবে মানুষের ওপর তারা অত্যাচার করে। ২০১৩ ও ১৪ সালে করেছে নির্বাচন বানচালের জন্য। এখন আবার একই উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। মানুষজন, হাটবাজার, দোকানপাট, যানবাহন, ব্যক্তিগত সম্পত্তি কোনও কিছুই রেহাই পাচ্ছে না।
তিনি অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এ অগ্নিসন্ত্রাসী যাকে যেখানে পাবেন তাকে আগে ধরেন। কেউ যদি অগ্নিসন্ত্রাস করতে যায়, বাসে আগুন দিতে যায়, ওইগুলোকে ধরে ওই আগুনেই ফেলে দেবেন। তাহলে যদি ওদের শিক্ষা হয়। তাছাড়া ওদের শিক্ষা হবে না।
নরসিংদীতে ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা বন্ধ করা ছাড়া তারা এই অবরোধ করে আর কি করতে পারবে? সরকার হটাবে! কীভাবে হটাবে? এই চোরাগোপ্তা হামলা করে সরকার হটানো যায় না। মানুষ সঙ্গে না থাকলে আন্দোলন হয় না। দুই-তিনটা চোরাগোপ্তা হামলা করে আর মানুষ মেরে ওরা দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।
বিএনপি সন্ত্রাসী আর জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের দল
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি হচ্ছে একটি সন্ত্রাসী দল, আর জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল। তাদের কথা দেশের মানুষ শোনে না।
একসময় এদের কথায় কিছু লোক আস্ফালন করে বেড়ালেও বিএনপির নেতৃত্ব শূন্যতার দিকে ইঙ্গিত করে তাদের নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টার কারণও সামনে আনেন তিনি।
তিনি বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে। যাকে তিনি পরিবারের অনুরোধে দয়া করে নিজস্ব ক্ষমতাবলে বাড়িতে থেকে চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছেন। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক জিয়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা এবং মানি লন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আর রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
তিনি আগামী নির্বাচনে যাকে প্রার্থী করা হবে তার পক্ষে দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট প্রত্যাশা করেন। এ সময় উপস্থিত লাখো জনতা দুই হাত তুলে সমস্বরে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দেয়।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান প্রমুখ।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী।