বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫০ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট
বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলো দেখতে মনোমুগ্ধকর। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, নায়াগ্রা জলপ্রপাত এবং গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ- এসব জায়গা ছাড়াও বিশ্বে আরও অনেক জায়গা রয়েছে যা দেখতে বিস্ময়কর। পৃথিবীতে এমনও অনেক বিস্ময়কর জায়গা আছে যা দেখতে অনেক সুন্দর এবং যা বিশ্বের মানচিত্রে দেখা যায় না। মানচিত্রে না দেখতে পাওয়ার কারণে অনেক মানুষ এই জায়গাগুলো সম্পর্কে জানেই না। চলুন জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীর ৫টি প্রাকৃতিক বিস্ময় সম্পর্কে যা হয়তো আপনি জানেন না-
১. দ্যা ওয়েভ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ওয়েভ হলো একটি বেলেপাথরের শিলা গঠন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনাতে অবস্থিত। এটি কলোরাডো মালভূমির প্যারিয়া ক্যানিয়ন-ভারমিলিয়ন ক্লিফস ওয়াইল্ডারনেসের কোয়োট বাটসের ঢালে অবস্থিত। এলাকাটি কানাব, উটাহ-এ গ্র্যান্ড স্টেয়ারকেস-এসকাল্যান্টে ন্যাশনাল মনুমেন্ট ভিজিটর সেন্টারে ব্যুরো অফ ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিএলএম) দ্বারা পরিচালিত হয়। জায়গাটি হাইকার এবং ফটোগ্রাফারদের কাছে জনপ্রিয়। এর সুন্দর, রঙিন এবং মনোমুগদ্ধকর দৃশ্যের জন্য জায়গাটি সবার আকর্ষণের কারণ। এর পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানো বেশ কঠিন। বিপুল সংখ্যক লোক এই জায়গাটি দেখার জন্য বেশ আগ্রিহী। এখানে দৈনিক লটারি সিস্টেম করে ১৬ জন লোক নির্বাচন করা হয়, শুধু তারাই এই জায়গাটি ভ্রমণ করতে পারবে। দ্য ওয়েভ”দেখার জন্য বছরের শ্রেষ্ঠ সময় হলো বসন্ত বা শরতের সময়।
২. পামুক্কালে পুল: তুরস্ক
পামুক্কালে দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের ডেনিজলি প্রদেশের একটি প্রাকৃতিক স্থান। যার নামের অর্থ ইংরেজি ভাষায় কটন ক্যাসেল। এটি তুরস্কের অভ্যন্তরীণ এজিয়ান অঞ্চলে মেন্ডারেস উপত্যকায় অবস্থিত। পামুক্কালে সাদা ট্র্যাভারটাইন টেরেস এবং প্রাকৃতিক উষ্ণ পরিবেশ এখানকার আকর্ষণীয় দৃশ্য। একজন পর্যটক হিসাবে আপনি পুলে স্নান উপভোগ করতে পারবেন। পামুক্কালে কার্বনেট খনিজ পদার্থের জন্য বিখ্যাত। এখানে বছরের বেশিরভাগ সময় একটি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু থাকে। পামুক্কালে পুল প্রায় ২,৭০০ মিটার (৮,৮৬০ ফুট) দীর্ঘ, ৬০০ মিটার (১,৯৭০ ফুট) প্রশস্ত এবং ১৬০ মিটার (৫২৫ ফুট) উঁচু। এটি ২০ কিলোমিটার দূরে ডেনিজলি শহরে উপত্যকার বিপরীত দিকে অবস্থিত। যা পাহাড় থেকে দেখা যায়। এটি ১৯৮৮ সালে হেরাপলিস এর সাথে একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছিল।
৩. সালার দে ইউনি: বলিভিয়া
বলিভিয়ার সালার দে ইউনিকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর এবং অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর আয়তন ৪,০৮৫ বর্গ মাইল (১০,৫৮২ বর্গ কিলোমিটার)। এটি বিশ্বের বৃহত্তম অবিচ্ছিন্ন উচ্চ-লবণ মরুভূমি। জায়গাটি শ্বাসরুদ্ধকর এবং আশ্চর্যজনক। বৃষ্টির পরে এটি দেখতে অনেক বেশি সুন্দর হয়। কারণ বৃষ্টির ফলে এটি একটি বিশাল আয়নায় রূপান্তরিত হয়। যার ফলে এর উপরে পুরো জায়গা জুড়ে আকাশকে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। এটি একটি অপটিক্যাল বিম্ব তৈরি করে। যেখানে হাঁটলে মনে হবে আপনি মেঘের মধ্যে হাঁটছেন। যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন তাদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান। লবণ এই অঞ্চলের প্রচুর মূল্যবান সম্পদ। এটির ভূত্বক লবণের উৎস হিসেবে কাজ করে।
৪. ঝাংজিয়াজি জাতীয় উদ্যান: চীন
ঝাংজিয়াজি জাতীয় উদ্যান চীনের হুনান প্রদেশের ঝাংজিয়াজিতে অবস্থিত একটি জাতীয় বন। বনটিতে গভীর গিরিখাত এবং উঁচু চূড়া রয়েছে। পার্ক জুড়ে স্তম্ভ-পাথর হলো এর সবচেয়ে জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য। এই স্তম্ভ-শিলাগুলোর মধ্যে কিছু ১,৯৭০ ফুট (৬০০ মিটার) পর্যন্ত রয়েছে। ঝাংজিয়াজি ন্যাশনাল পার্কটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এবং জেমস ক্যামরনের অবতারে ভাসমান পর্বতগুলোর মধ্যে একটি। এখানে আপনি ঝাংজিয়াজি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গ্লাস ব্রিজে ঘুরে দেখতে পারেন, যা ২০১৬ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে লম্বা কাচের তৈরি সেতু। পার্কের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য হলো স্তম্ভের মতো গঠন যা পুরো পার্ক জুড়ে দেখা যায়। এখারকার আবহাওয়া সারা বছর আর্দ্র থাকে এবং এর ফলস্বরূপ পাতাগুলো খুব ঘন হয়।
৫. চকোলেট হিলস: ফিলিপাইন
চকোলেট হিলস হলো ফিলিপাইনের বোহল প্রদেশের একটি ভূতাত্ত্বিক গঠন। চকলেট হিলস বোহোলের একটি বিখ্যাত পর্যটক আকর্ষণ। এই স্থানকে দেশটির তৃতীয় জাতীয় ভূতাত্ত্বিক স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। চকোলেট হিলস শুষ্ক মৌসুমে তাদের চকোলেট রঙের কারণে বিখ্যাত। এখানে ১,২৬০টি পাহাড় একত্রে আছে এবং প্রায় ১৯ বর্গ মাইল (৫০ বর্গ কিলোমিটার) এলাকা জুড়ে ১,৭৭৬টি পাহাড় রয়েছে। বর্ষাকালে পাহাড়গুলো সবুজ ঘাসে ঢাকা থাকে কিন্তু বৃষ্টি থামলেই ঘাস মরে যায়। ঘাস মরে গেলে পাহাড়ের রঙ চকোলাটি রঙে রূপান্তরিত হয়। পাহাড়ের উচ্চতারও পরিবর্তন হয়। পাহাড়ের উচ্চতা বেড়ে ৩৯৪ ফুট (১২০ মিটার) পর্যন্ত পৌঁছায়। পাহাড়গুলো পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, কিন্তু এখানে পর্যটকদের ঘুরতে দেয়া হয় না।