সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ অপরাহ্ন
স্পোর্টস ডেস্ক
বোলিংয়ে শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধার হারিয়েছেন মুস্তাফিজ-হাসানরা। অন্যদিকে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন কিউই ব্যাটাররা। লাথাম-ইয়াংদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহ গড়ে স্বাগতিকরা। সেই লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। কখনোই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি সফরকারীরা। শেষ পর্যন্ত ডিএলএস মেথডে ৪৪ রানে হেরেছে টাইগাররা। এই জয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড।
আজ রবিবার ডানেডিনে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ডিএলএসে নির্ধারিত ৩০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৯ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৪ বলে ১০৫ রান করেছেন ইয়াং। বাংলাদেশের হয়ে ৬ ওভারে ২৮ রানে ২ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার শরিফুল ইসলাম। ডিএলএসে বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় ২৪৪ রানের। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৩০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০০ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেছেন বিজয়।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ভালো শুরু। তবে শুরুটা মোটেও ভালো করতে পারেনি। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরলেন সৌম্য সরকার। দলে ফিরে আরো একবার ব্যর্থ হলেন তিনি। চতুর্থ বৈধ ডেলিভারিটি লেগ স্টাম্পের বাইরে খানিকটা খাটো লেংথে করেছিলেন অ্যাডাম মিলনে। আউট সুইং করে বের হয়ে যাওয়া বল ডিফেন্স করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন সৌম্য। সাজঘরে ফেরার আগে ৪ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি এই ওপেনার।
সৌম্যের পর দ্রুতই ফিরতে পারতেন এনামুল হক বিজয়ও। জ্যাকব ডাফির করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েছিলেন বিজয়। তবে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে সেটা হাতে জমাতে পারেননি উইকেটকিপার টম ব্লান্ডেল। ফলে ৮ রানে জীবন পান বিজয়।
তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। ইশ সোধিকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি। তার আগে শান্তর ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ বভলে ১৫ রান।
শান্ত ফেরার পর লিটনকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত রান তুলায় মনযোগ দিয়েছিলেন বিজয়। তবে ৪৩ রানে থামেন তিনি। একবার জীবন পেয়েও হাফ সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে তাকে।
লিটন ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ক্লার্কসনের খাটো লেংথের বলে পুলে করতে গিয়ে ভুল করেন লিটন। তার গ্লাভস ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটকিপারের গ্লাভসে। সাজঘরে ফেরার আগে ১৯ বলে ২২ রান করেছেন তিনি।
ছয়ে নেমে ব্যর্থ হয়েছেন মুশফিক। আরো একবার রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনলেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১০ বলে ৪ রান করেছেন মুশফিক।
লোয়ার মিডল অর্ডারে তাওহিদ হৃদয়-আফিফ হোসেনরা আক্রমণাত্মক খেলেছেন, ভালো শুরুও পেয়েছেন। তবে কেউই দায়িত্ব নিয়ে লম্বা সময় ব্যাটিং করতে পারেননি। হৃদয়ের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৩ রান, আফিফ ফিরেছেন ৩৮ রান করে।
শেষদিকে লেজের সারির ব্যাটারদের নিয়ে খানিকটা লড়াইয়ের চেষ্টা করেছেন মিরাজ। তবে তার ২১ বলে ২৮ রানের অপরাজিত ইনিংস শুধুই ব্যবধান জমিয়েছে, জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি।
এর আগে টসের পরপরই ডানেডিনে বৃষ্টি নামে। তাতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় নষ্ট হয়। ফলে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে নেমে আসে ৪৬ ওভারে।
বৃষ্টির পর ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম ওভারেই কিউই শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। চতুর্থ বলটি অফ স্টাম্পের ওপর গুড লেংথে করেছিলেন এই বাঁহাতি পেসার। আউট সুইং করে বল বের হয়ে যাওয়ার সময় রাচিন রবীন্দ্রের ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় লেগে মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়ে। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্ম করা এই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন ডাক খেয়ে।
এক বল পর আবারও উইকেটের দেখা পেয়েছেন শরিফুল। প্রথম ওভারের শেষ বলটি ব্যাক অব লেংথে করেছিলেন এই পেসার। এবারও আউট সুইংয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন ব্যাটার। সামনের পায়ে ভর করে অফের দিকে খেলতে গিয়ে স্লিপে এনামুল হক বিজয়ের হাতে ধরা পড়েন হেনরি নিকোলস। ২ বল খেলে রানের রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। প্রথম ওভারেই দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে স্বপ্নের মতো শুরু এনে দেন শরিফুল।
এরপর উইল ইয়াং ও টম লাথামের ব্যাটে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করে কিউইরা। স্বাগতিকরা যখন ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় তখন ডানেডিনে হানা দেয় বৃষ্টি। ১৪তম ওভারের খেলা চলাকালে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হন আম্পায়ার।
মিনিট ত্রিশেক পর আবারও শুরু হয় খেলা। দ্বিতীয় দফা বৃষ্টিতে হারিয়ে যায় আরও ৬ ওভার। ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪০ ওভারে।
দুই দফা বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলেও বেশিক্ষণ চালিয়ে যাওয় সম্ভব হয়নি। এই দফায় প্রায় ৬ ওভারের মতো খেলার পর ২০তম ওভার চলাকালে ডানেডিনে আবারও বেরসিক বৃষ্টির হানা। তাতে তৃতীয়বারের মতো বন্ধ হয় খেলা।
এবারও প্রায় আধা ঘণ্টা পর খেলা শুরু হয়। আরো একবার কোপ পড়ে ম্যাচের দৈর্ঘ্যে। এবার কমানো হয় ১০ ওভার। তিন দফা মিলিয়ে মোট ২০ ওভার কমেছে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৩০ ওভারে।
তৃতীয়বার বৃষ্টি শেষে কিউইরা যখন ব্যাটিংয়ে নামে তখন তাদের ইনিংসের বাকি ছিল প্রায় ১০ ওভার। সেটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন স্বাগতিক ব্যাটাররা। ইয়াং ও লাথাম রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন! ২৬তম ওভারে লাথামকে বোল্ড করে ১৭১ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ। লাথাম ফেরেন ৭৭ বলে ৯২ রান করে।
তবে এরপর চ্যাপম্যানও উইকেটে এসে আক্রমণাত্মক খেলেছেন। তার ১১ বলে ২০ রানের ক্যামিও ছিল দারুণ কার্যকরী। লাথাম নার্ভাস নাইন্টিতে কাটা পড়লেও সেঞ্চুরি পেয়েছেন ইয়াং। মাইলফলক ছুঁতে তিনি খরচ করেছেন মাত্র ৮২ বল। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০৫ রান।
শেষদিকে জ্যাক কার্সন-টম ব্লান্ডেলরা দ্রুতই ফিরেছেন। সৌম্য সরকারের করা ইনিংসের শেষ ওভারে রান আউট হয়েছেন ৩ ব্যাটার। তবে তার আগেই তাদের সংগ্রহ দুইশ ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশের হয়ে ৬ ওভারে ২৮ রানে ২ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার শরিফুল ইসলাম। তাছাড়া ৫ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে এক উইকেট পেয়েছেন মিরাজ।