শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : “ডিএনএ রিপোর্ট প্রস্তুতকারীকে সাক্ষ্য প্রদান সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং সাক্ষ্য আইন: আমাদের করনীয়” শীর্ষক সেমিনার বুধবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকার বেইলী রোডে অবস্থিত ‘‘ডিএনএ ল্যাবরেটরী ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর’’ এর ছয় তলায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মিজ নাজমা মোবারেক। উক্ত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ডিএনএ ল্যাবরেটরী ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ডিজি ডা: এম. এ. পারভেজ রহিম বলেন, ডিএনএ আইন ২০১৪-এর ৩৭ ও ৩৮ ধারায় ডিএনএ রিপোর্টেকে সাক্ষ্য Evidence হিসেবে গ্রহন করা যাবে। কিন্তু সাক্ষ্য আইন ৭২ (ক) ও ১৪৬ ধারা অনুযায়ী, ডিএনএ রিপোর্ট ও অন্যান্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিপোর্ট সমূহকে উপযুক্ত প্রমান (Evidence) হিসেবে রিপোর্ট প্রস্তুতকারীকে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা বলা আছে। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরার জন্য মূল আলোচক, আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোঃ সাইমুম রেজা তালুকদারকে অনুরোধ করেন। মূল আলোচক মোঃ সাইমুম রেজা তালুকদার তার আলোচনায় বলেন, সংবিধানের ১১১ ধারা মতে উচ্চ আদালত ন্যায় বিচারের স্বার্থে ডিএনএ রিপোর্ট প্রস্তুতকারীকে স্বাক্ষী প্রদানের জন্য ডাকতে পারবে।
সংবিধানের ১১২ ধারা মতে, নিম্ন আদালত এই বিষয়ে উচ্চ আদালতকে সহায়তা করবে। হাইকোর্ট ফৌজদারী মিস মোকদ্দমা নং ২৩৮৩৭/২০২১ এর রায়ে ২১ ও ২২ নাম্বার পয়েন্টে বলেছেন যে, আদালত যদি মনে করে তাহলে রিপোর্ট প্রস্তুতকারীকে স্বাক্ষ্য দেওয়ার জন্য চাইতে পারে।
এছাড়াও রায়ে আরো বলা হয়েছে যে, রিপোর্ট প্রস্তুতকারী যদি ডিএনএ রিপোর্টকে পুরোপুরি প্রমাণ করতে না পারে তাহলে আদালত রিপোর্টটি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ নাও করতে পারে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আদালত চাইলে আরো বেশি তদন্ত করতে পারবে।
এছাড়াও তিনি বলেন, ডিএনএ আইন-২০১৪ এর ৩৭ ও ৩৮ ধারায় ডিএনএ রিপোর্টকে সাক্ষ্য Evidence হিসেবে গ্রহণ করতেই হবে বলে বাধ্যবাধকতা নেই। তাই আদালত চাইলে রিপোর্ট প্রস্তুতকারীকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য ডাকতে পারে। মূল আলোচনার পরে সভায় উপস্থিত অনেকে বিষেশজ্ঞ মতামত প্রদান করেন।
তন্মধ্যে সিআইডির ডিজি, মোঃ জামশেদ আলী বলেন, ফৌজদারী এই মামলাটিতে হাইকোর্টের অবজারভেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়। আদালত প্রয়োজন মনে করলে অবশ্যই রিপোর্ট প্রস্তুতকারীদের সাক্ষী গ্রহণ করতে পারে, এক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ত্বরান্বিত হবে। সিআইডি চীফ এনালিষ্ট আহমেদ ফেরদৌস বলেন, সিআইডি ও ন্যাশনাল ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবের জনবলের ঘাটতি থাকায় সব মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষী দেওয়া বাস্তব সম্মত নয়।
এক্ষেত্রে ল্যাবের কার্যক্রমই পরিচালনা দু:সাধ্য হয়ে পড়বে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত ডিএনএ পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে অথচ ন্যাশনাল ডিএনএ ল্যাবের রাসায়নিক কিটের অপর্যাপ্ত সরবরাহ ও ল্যাবে কর্মরত ডিএনএ লাবের সাইন্টিষ্টদের চাকুরী সরকারীকরণ না করাতে উষ্মা প্রকাশ করেন।
এদিকে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবের ল্যাব প্রধান মোঃ জাবেদুল আলম খন্দকার বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে বিভিন্ন হত্যা মামলা, অত্যন্ত হিংস্র অপরাধ কিংবা গণধর্ষণের ক্ষেত্রে আদালত ডিএনএ রিপোর্ট প্রস্তুতকারীদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে তলব করেন। সাধারণ মামলা যেমন: পেটারনিটি কিংবা আত্নীয়তার সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন না, ডিএনএ রিপোর্টকে চূড়ান্ত মতামত হিসেবে গ্রহণ করেন।
তিনি আরো বলেন, ন্যাশনাল ডিএনএ ল্যাবটি এতোদিন প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রকল্পটি গত ৩০শে জুন শেষ হয়ে গেছে। ফলে ডিএনএ রিপোর্ট প্রস্তুতকারীরা চাকুরী হারানোর শংকায় পড়েছে, জুলাই মাস থেকে তারা বেতন পাচ্ছে না।
এক্ষেত্রে, আদালত ডিএনএ রিপোর্ট প্রস্তুতকারীকে সাক্ষী হিসেবে তলব করে চাকরি না থাকার কারণে তাদের পাওয়া না গেলে ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হতে পারে।
এছাড়াও তিনি বলেন, ডিএনএ ডাটাবেইজের ডিএনএ ডাটাকে কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সঠিক আইনীভাবে ব্যবহার করা যায় সেই বিষয়ে ভবিষ্যতে দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন আছে। ন্যাশনাল ডিএনএ ল্যাবের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদ হাসান বলেন, পূর্বে আদালতে সাক্ষী দিতে যেয়ে নিরাপত্তা নিয়ে শংকায় পড়েন। সবশেষে সভাপতির বক্তব্যে সচিব মিজ নাজমা মোবারেক বলেন, জনবলের সংকটের কারনে সকল মামলার সাক্ষ্য প্রদান করা অত্যন্ত কঠিন কাজ।
বিশেষ বিশেষ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা আদালতকে জানানো যেতে পারে। তাই তিনি এ বিষয়ে আদালতের কাছে দিক নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি সাক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়েও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার কথা বলেন। এছাড়াও উক্ত সভায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।